![](https://bangobarta.webbandhanofficial.com/wp-content/uploads/2024/06/gujia.jpg)
পারস্য দেশীয় খাবার ‘গজক’ তৈরি হতো তিল আর চিনি দিয়ে। দেখতে কাঠির
মতো। পরে এর সঙ্গে যোগ হয় ময়দা। আমাদের দেশে এসে নাম বদলে হয়
‘গোঝা’। হিন্দিতে, গোঝাকে ক্ষুদ্র অর্থে বলা হতো ‘গুঝিয়া’। পরে লোকমুখে নামটি
বদলে যায় গুজিয়া’ বা গুঁজিয়া’য়। সেই সঙ্গে উপকরণও যায় বদলে। এখনকার
গুজিয়া আর আগেকার গুজিয়ার অনেক তফাৎ ছিল। দেখতে এক কিন্তু ব্যবহৃত
উপকরণ ছিল পৃথক। ক্ষীর ও হাতে তৈরি দোবরা চিনি একসঙ্গে ভালো করে মেখে
কম আঁচে ভাজা হতো। অন্যদিকে মিছরি, ছোট এলাচগুঁড়ো, পেস্তা ও বাদাম বাটা
কিছুটা রেখে বাকিটা ওই ভাজা ক্ষীরের সঙ্গে ভালো করে চটকে ছোট ছোট লেচির
আকারে থালায় রাখা হতো। এরপর প্রতিটি লেচিতে ক্ষীরের পুর দিয়ে লেচিটা
সামানা লম্বা করে মাঝখানে আঙুলের চাপ দিলেই দুই পাশের প্রান্তদুটি উপর দিকে
উঠে যায় । এবার আলতো করে জলে ভেজা আঙুল দিয়ে প্রান্তদুটি জুড়ে দিলেই গুজিয়া
প্রস্তুত। সম্পূর্ণ কাজটি করতে হতো পাক ঈষদোষ্ণ থাকাকালীন। না হলে উত্তম
গুজিয়া তৈরি হতো না ।
তবে স্বাদ নিলেই বুঝতে পারবেন বাঙালি ও বিশেষ করে উত্তর প্রদেশীয় মিষ্টান্ন
প্রস্তুতকারীদের গুজিয়ার স্বাদ ভিন্ন। এখনকার বাঙালি-গুজিয়া তৈরি হয় শুধু ক্ষীর
আর সাধারণ চিনি মিশিয়ে। এরই মধ্যে হলুদ চিনি মেশিনে গুঁড়ো করে মেশালে
খেতে সুস্বাদু এবং চিবনোর সময় সামান্য কচকচে ভাব হয়। তাকে বলে কচা-
গুজিয়া। সেই সব গুজিয়া দেখতে সামান্য হলদেটে হয়।
এখানে যে ছবিটা দিয়েছি এবং যে গুজিয়াগুলো দেখে এটা লেখার সাধ হলো, সেগুলো রিষড়ার ১৭৫ বছরের প্রাচীন খ্যাতনামা মিষ্টির দোকান ফেলু মোদকের। শিল্পী যত বড়ই হোক,প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করলে তাঁর শিল্পত্ব বজায় থাকে না। বলেছিলেন নন্দলাল বসু। আর শিল্পী মানে তো শুধু পেন্টার বা ভাস্কর নন,যিনি মিষ্টি তৈরি করেন, তিনিও শিল্পী। মনে আছে, জটায়ু বারাণসীর কচৌরি গলির রাবড়ি খেতে খেতে বলা সেই বিখ্যাত ডায়ালগ! বলেছিলেন, ‘রাবড়ির আবিষ্কারক টেলিফোন-টেলিগ্রাফ আবিষ্কারকের চেয়ে কিসে কম মশাই!’
সত্যি কথা! যাই হোক, প্রতিদিন একইরকম গুঁজিয়া দেখতে দেখতে ফেলু মোদকের বংশধর অমিতাভ মোদকের মাথায় আসে,যদি স্বাদে কিঞ্চিত রকমফের আনা যায়,তাহলে গুঁজিয়ারও মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে ।
সেই ভাবনারই ফসল এই পঞ্চরত্ন গুঁজিয়া। গুঁজিয়ার উপকরণের সঙ্গে অন্য উপকরণ মিশিয়ে তৈরি হলো স্ট্রবেরি,ম্যাঙ্গো,চকোলেট,কেশর আর স্পেশাল গুঁজিয়া। পাঁচটির পাঁচ রকম স্বাদ।
যতই লেখা পড়ুন,যে কোনও মিষ্টির ভালো মন্দের আসল পরীক্ষার রায় দেবে কিন্তু আপনার জিভ।অতএব শুভস্য শীঘ্রম।
ও, যেটা বলার,ফেলু মোদকের ঠিকানা রিষড়া ফাঁড়ির কাছে জি টি রোডের ওপর।
![](https://bangobarta.webbandhanofficial.com/wp-content/uploads/2024/06/gujia-642x1024.jpg)
![](https://bangobarta.webbandhanofficial.com/wp-content/uploads/2024/06/fel.jpg)